ডিএফএস : এগুচ্ছে বাংলাদেশ
যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অর্থের যোগানের সাথে বেশি প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। একটি দেশের মোট জনসংখ্যার সবাই জনশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয় না কিংবা তারা জনসম্পদও নয়। জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যা নিয়ম সংবলিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশ এমনিতেই জনসংখ্যা আধিক্য একটি দেশ, তদুপরি দক্ষ জনশক্তির প্রবল অভাব রয়েছে। ফলে এ দেশ কাক্সিক্ষত উন্নয়ন থেকে এখনও বঞ্চিত। দেশে তৃণমূল পর্যায়ে এখনও অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের শিকার। আশার কথা, স্বাধীনতা মুহূর্তেও দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৮০%, সেখানে এই হার ২০% এর নিচে নেমে এসেছে। এর পেছনে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও দারিদ্র্য নিরসনের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ, বেসরকারি খাতের শিল্পায়ন এবং জনশক্তি রপ্তানি খাতের ভূমিকার পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এনজিও ও এমএফআইদের ব্যাপক ভূমিকা ও অবদান রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য অর্থনৈতিক অঙ্গনে চালু হয়েছে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসÑ ডিএফএস। গত জুন ২০২৩ পর্যন্ত দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৮ কোটির বেশি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, দেশে ৯৭.৪% পরিবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এদের মধ্যে ৬০% এর বেশি পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন অনুভব করে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে, দেশের ৫২ শতাংশেরও বেশি মানুষ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সব স্মার্টফোন ব্যবহারকারীই ডিএফএসের আওতায় অর্থ লেনদেন করেন না।
তথ্যপ্রযুক্তির এই উন্নয়ন ধারায় ইন্টারনেট সংযোগকৃত একটি স্মার্টফোনের সঠিক ব্যবহার ব্যক্তির কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধিসহ তার কর্মক্ষমতা, কর্মদক্ষতা ও নতুন ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি করতে সহায়ক। জেন্ডারভিত্তিক তুলনায় ৭৩ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, তাদের কর্মজীবন ও দক্ষতা বিকাশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা করছে।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ধারার সাথে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুতে দেশের এনজিও/এমএফআই সেক্টর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দেশের ক্ষুদ্র অর্থায়নের সুবিধা ভোগ করছে প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ পরিবার। একসময় যারা ছিল নিরক্ষর, দরিদ্র ও অসহায়, দেশ ও সমাজ সম্পর্কে যাদের তেমন কোনো ধারণা ছিল না, সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি থেকে ছিল যথেষ্ট পিছিয়ে, ছিল অসচেতন, সেই তারাই আজ স্মার্টফোনের ব্যবহারিক প্রক্রিয়ায় অর্জন করেছে দক্ষতা। তারা জানে, কীভাবে লেনদেন করতে হয়। কীভাবে মেসেজ পাঠাতে হয়। এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি দেশকে স্থিতিশীল উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপনে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে। দেশ ধীরে ধীরে যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এগুতে পারছে, তেমনই ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং তৎপরবর্তী পর্যায়ে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যাংকিং হিসাববহির্ভূত মানুষদের লেনদেনের সুযোগ এনে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডিএফএসের এই সেবা ব্যাংকের চেয়েও অধিক সেবামনস্ক।
বুরো বাংলাদেশসহ উন্নয়ন খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এই দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে যাচ্ছে। এতে করে তৃণমূল পর্যায়ে গড়ে উঠছে অসংখ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। আশা করা যায় ২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারকে ডিএফএসের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এ সংখ্যাটি প্রকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেখা ও ছবি দিয়ে কমিউনিকেশন অ্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া টিমের সদস্যরা সার্বিক সহযোগিতা করেছেনÑ প্রত্যয় এর পক্ষ থেকে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।