রুনা বেগমের স্মার্ট কৃষি
আব্দুর রহমান
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিরইল গ্রামের মোছাম্মৎ রুনা বেগম একজন ক্ষুদ্র প্রান্তিক ও বর্গা কৃষাণী। তার বয়স প্রায় ৪৫ বছর। দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে সংসারের শুরু থেকেই বিভিন্ন স্বপ্ন ছিলো তার। এ স্বপ্ন পূরণ করার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে আসছেন তিনি। রুনা বেগমের এক মেয়ে, এক ছেলে। চার সদস্যের সংসার। বর্গা ও লিজসহ সর্বসাকুল্যে তার মোট ধানী জমির পরিমাণ ১২৫ শতাংশ। বসতবাড়ি ১০ শতাংশ জমির ওপর। অনেক বছর ধরেই ধান চাষ করছিলেন তিনি কিন্তু কখনো খরচের টাকা উঠলেও আশানুরূপ বাজারমূল্য না পেয়ে লোকসানের বোঝা বহন করছিলেন। তিনি স্থানীয় বুরো বাংলাদেশ, কৃষি অফিস ও প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে গত কয়েক বছর ধরে ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করেন ধান চাষ, গরু, কবুতর ও রাজহাঁস পালন। এতে লাভের মুখ দেখলেও পুঁজির অভাবে বাড়তে পারেনি গরু মোটাতাজাকরণ ও ধান চাষের পরিধি। তার উদ্যম ও কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা দেখে এসএমএপি প্রকল্পের আওতায় পুঁজির যোগান দিতে এগিয়ে আসেন বুরো বাংলাদেশের রাজাবাড়ীহাট শাখা।
প্রথম ধাপে ২০২২ সালে বুরো বাংলাদেশ তাকে রাজাবাড়ীহাট শাখার সদস্য করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাইকার আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত এসএমএপি প্রকল্পের আওতায় এক লাখ টাকা ঋণ প্রদান করে। এসএমএপি সদস্য হিসেবে টেকনিক্যাল ওরিয়েন্টেশন পাওয়ার পর সেই টাকা দিয়ে ১টি ছোট ষাঁড় গরু, ৮টি কবুতর ও ২টি রাজহাঁস ক্রয় করেন তিনি। পরবর্তীতে ষাড়টি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ষাঁড় গরু বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। বর্তমানে রুনা বেগমের ৬টি গরু, ২০টি কবুতর ও ৬টি রাজহাঁস রয়েছে যার মূল্য প্রায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয় ধাপে ২০২৩ সালে পুনরায় এক লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন তিনি। ঋণের টাকা দিয়ে আধুনিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ, ব্রি-৩৪ ধান চাষ শুরু করেন ১১৫ শতাংশ জমিতে। তার ধান চাষে খরচ হয় ৫২ হাজার টাকা এবং বিক্রি করেছেন ৯৪ টাকায়। এই বছরে তিনি ধান বিক্রি করে ৪২ হাজার টাকা আয় করেছেন। রুনা বেগম বলেন, ব্রি-৩৪ স্থানীয় চিনিগুঁড়া বা কালিজিরা চালের মতোই সুগন্ধি, ফলনও দ্বিগুণ প্রায়। এ ধরনের ধান চাষে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। বর্তমানে রুনা বেগমের ৬টি গরুর মধ্যে ১টি ষাঁড় এর দাম প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, তিনি এ বছর গরু বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা আয় করবেন বলে আশাবাদী।
দরিদ্র রুনা বেগম ও তার স্বামী একসময় অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি করে অভাবের সংসার চালাতো। এখন তাদের নিজের বাড়িতে গোয়ালভরা গরু, গোলাভরা ধান, উঠানভরা কবুতর ও হাঁস রয়েছে। এলাকার একজন সফল স্মার্ট কৃষাণী হিসাবে সবার কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন তিনি। রুনা বেগমের এমন বহুমুখী সফলতায় গ্রামের মানুষের কাছে এখন তিনি স্মার্ট কৃষাণী হিসাবে পরিচিত।
লেখক: আরপিও-কৃষি, এসএমএপি প্রকল্প
রাজশাহী ও নওগাঁ অঞ্চল, বুরো বাংলাদেশ