গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ   Thursday,25 April 2024

বুরোর ঋণে বদলে যাচ্ছে ওঁরাও নারী শেফালীর জীবন

about1

মহাদেবপুর উপজেলার বকাপুর গ্রামের শেফালী বারোয়া বিপ্লব টপ্পার জীবন মান বদলে গেছে বুরো বাংলাদেশ এর ঋণ সহায়তায়। শেফালী বারোয়া অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। শেফালীর বাবার নাম সুনেয়া বরোয়া এবং মা মালতী এক্কা। তাদের বাড়ি পোরশা থানার বড়গ্রাম। অর্থের অভাবে অর্থাৎ পিতার সংস্থার অসচ্ছল থাকায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তার স্বামী বিপ্লব টপ্পা দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। তার পিতার নাম বুদো টপ্পা, মা সুন্দরবালা এক্কা।

শেফালী বিপ্লবের বিয়ে হয় ২০১৮ তে। দুজনের পরিবারই ছিল দরিদ্র। বিপ্লব টপ্পা টাকার জন্য এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। সে বকাপুর হাই স্কুলের ছাত্র ছিল। বকাপুর হাই স্কুলে সে ছিল খুব পরিচিত মুখ, কারণ সে ভালো ফুটবল খেলতো। তার ইচ্ছে ছিল বড় ফুটবল খেলোয়াড় হবে, কিন্তু সুযোগের অভাবে হতে পারেনি।

ছোটবেলা থেকেই ওরা কর্মঠ পারিবারিকভাবেই। বিপ্লব পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধের দিনগুলোতে হাটে হাটে বাদাম বিক্রি করতো। মাঠে মজুরিতেও কাজ করতো। সময় সে অ্যামব্রয়ডারি কাজ শেখে যাতে ঝড় বৃষ্টিতেও ঘরে বসে কাজ করা যায়, আয় বন্ধ না হয়।

বিপ্লব টপ্পা বুরো বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে। তার নিজের ৩২ হাজার টাকা মিলিয়ে একটা গাভি ক্রয় করে। কেজির বেশি দুধ হয়। কিন্তু সে কেজির বেশি গাভি থেকে গ্রহণ করে না। বাকিটুকু ওলানে রেখে দেয় বাছুরের জন্য। আর দুধ বিক্রি না করে শিশু সন্তানকে খাওয়ায়। তার বাছুরটা নেপালি জাতের। মাস বয়সের এই বাছুরটির দাম উঠেছে ৬৫ হাজার টাকা। বিপ্লব বললো বছর পর এর দাম লাখ ৫০ হাজার টাকা হবে। বিপ্লবের বাবা-মা দুজনেই মাঠে কাজ করে। আগে ১৫০/২০০ টাকা ছিল মজুরি, এখন তা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

বিপ্লবের ছেলে, নাম কৃষ্ণ টপ্পা। বয়স আড়াই বছর। সিজনে ২০ দিন খেটে তারা আগে পেতো ৪০ হাজার টাকা এখন পায় ৭০/৮০ হাজার টাকা। এক সময় তাদের খুব অভাব ছিল, এখন উন্নতি হয়েছে। আগে পুকুর থেকে পানি এনে ভাত রাঁধতে হতো। এখন মোটর দিয়ে পানি উঠিয়ে সেই পানি পানসহ ভাত রাঁধে। তবে এখনো বড়গ্রামের অনেক মানুষই পুকুরের জল দিয়ে ভাত রান্না করে।

বুরো বাংলাদেশের ঋণ সহায়তা সামাজিক সচেতনতা তৈরির কারণে এখন তাদের অনেকেই টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করে। বিপ্লবের ঘরে ফ্রিজও আছে। বাচ্চার অসুস্থতা মুহূর্তে ডাক্তার যে ওষুধ দিয়েছে তা ফ্রিজে রাখতে হয়। ফ্রিজটি ২৭ হাজার টাকায় তা ক্রয় করেছে। তাদের পরিবার সুখী পরিবার। এই পরিবারের সম্পদ ২টা গরু, ১টা ছাগল, ২টা রাজহাঁস, ৫৫টা মুরগি (দেশি) ৪টা ডিম পাড়ে। ডিম শিশুকে খাওয়ানো হয়। তবে নিজেদের কোনো ফসলি জমি নেই।

বিপ্লবের বাবা বুদো টপ্পা একটি পুকুরের পাহারাদার। দিনে মাঠে মজুরি দেন, রাতে পাহারা দিয়ে মাসে ৭০০০ টাকা পান। এভাবেই তাদের সংসার স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে। বিপ্লব টপ্পা বলেন, আমাদের এই স্বচ্ছলতা উন্নয়নের পেছনে বুরো বাংলাদেশের ঋণ সহায়তাসহ তাদের পরামর্শ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ভবিষ্যতে অধিক টাকা ঋণ নিয়ে তিনি তার অ্যামব্রয়ডারি মেশিন আরো বাড়াতে চান।